ব্রাহ্মবাড়িয়া জেলায় অডিশনের মাধ্যমে হিফজুল কুরআন ২০২০ প্রতিযোগীতা শুরু
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে ৬জন শিশু নিহত
বেলুনে গ্যাস ভরার সময় বিস্ফোরণে রূপনগরে ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় আরোও ২০জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বুধবারের এই ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় বেলুন বিক্রেতা নিজেই গ্যাস তৈরি করতেন।
ঘটনাটি সামনে থেকে দেখেছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী (সাকিব) জানায়, আমরা ৩ বন্ধু রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি একজন লোককে (সোহেল) ঘিরে অনেকগুলো শিশু দাঁড়িয়ে আছে। কৌতুহলবশত সেখানে গিয়ে দেখি, একটি সিলিন্ডারের ভেতর পানি, ছাই এবং ক্যামিকেল দিয়ে গুতোগুতি করছে ওই লোক। তাকে মামা সম্ভোধন করে বলি, এটা তুমি কী করছো? সে কোনো উত্তর দেয় না। পাশ থেকে একজন উত্তর দেয় ওই লোক (সোহেল) বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করে। গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। তাই সিলিন্ডারে গ্যাস তৈরি করছে। এ কথা শোনার পর আমরা ৩ বন্ধু সেখান থেকে চলে যাই। এর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে। দ্রুত এসে দেখি ঘটনাস্থলে হতাহত অবস্থায় ৭ জন পড়ে আছে। এর মধ্যে ৪ জনই মৃত। এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছিল সেখানে। একজন নারীর হাত ছিটকে এসে আমার সামনে পড়ে। ওই নারী ছিল অজ্ঞান অবস্থায়। একজন মাদ্রাসাছাত্রকে নারী-ভুরি বের হওয়া অবস্থায় দেখি। একজন শিশু ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় লাফাচ্ছিল।
ঘটনাটি খুব সামনে থেকে দেখেছেন এমন আরেকজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান (মোবারক), বেলুন বিক্রেতার নাম সোহেল। সে সিলিন্ডারের ভিতরে নিজের তৈরি করা গ্যাস ব্যবহার করতেন। সোহেল সিলিন্ডারের ভিতরে পানি এবং ক্যামিকেলের মিশ্রণ ঘটিয়ে এই কৃত্রিম গ্যাস তৈরি করতো এবং এই গ্যাস দিয়েই বেলুনগুলো ফুলানো হতো। ঘটনার ঠিক ৫ মিনিট আগে আমি (মোবারক) মনিপুর স্কুলের সামনে আসি। আমি দেখতে পাই সিলিন্ডারের মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। এ সময় বেলুন বিক্রেতা সোহেল সিলিন্ডারের মুখ খুলে ছাই এবং পানি ঢালে। পরে সিলিন্ডারের ভিতর লাঠি দিয়ে গুঁতু দেয়। ঠিক ঐ সময়ই হঠাৎ বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরণের সময় সোহেলের শিশু সন্তানও ঘটনাস্থলে ছিল। তারা দুইজনই আহত হন। বিস্ফোরনে সোহেলের ভুরি বাইরে বের হয়ে যায়। সে তার পেটে চাপ দিয়ে ধরে একটি রিক্সা নিয়ে দ্রুত স্বানীয় একটি হাসপাতালে চলে যায়।
বিস্ফোরণে আহত নারী জান্নাত বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো আজ বিকেলে বাজার করে ফেরার সময় ১১ নম্বরের সড়কের মাথায় আসতেই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে তাঁর স্ত্রীর ডান হাতের একটি অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী (জয়) জানান, একটি ভ্যানগাড়িতে করে ওই ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতেন। দুই-তিন দিন পরপরই রূপনগর ১১ নম্বর সড়কে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতে আসতেন এক ব্যক্তি। তিনি আসা মাত্রই তাকে ঘিরে ধরত ফজর মাতবরের বস্তির শিশুরা। অন্যদিনের মতো আজও বেলুন বিক্রেতার গাড়িটিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিল কোমলমতি শিশুরা। কে জানতো এভাবে সিলিন্ডার বিস্ফোরন ঘটবে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১০-১২ জন প্রায় ১৫ ফুটের মতো ছিটকে পড়েন। পেটে আঘাত পাওয়া আরেক শিশু দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই সে লুটিয়ে পড়ে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মুহূর্তেই ঝরে যায় পাঁচটি শিশুর তাজা প্রাণ।
স্থানীয় ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই বেলুন বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি তাঁকে চলে যেতে বলি। এরপর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে তিনি একটি টিনশেডের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই।
এদিকে আহত অবস্থায় বেলুন বিক্রেতা সোহেলকে পুলিশ পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করে। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। আহতদের ঢামেক, সোহরাওয়ার্দীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার রাত পৌনে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছে, তারা হল- রমজান (৮), নূপুর (৭), শাহীন (৯), ফারজানা (৬), রুবেল (১১) এবং রিয়া (৭)। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়া আহতদের মধ্যে ১২ জন শিশু, দুইজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। তারা হলেন জুয়েল (২৫), আবু সাঈদ (২০), জান্নাত (২৫), মোরসালিনা (৯), নিহাদ (৮), অর্ণব ওরফে রাকিব (১০), জনি (১০), তানিয়া (৮), বায়েজিদ (৭), জামেলা (৭), মিজান (৭), মীম (৮), ওজুফা (৯), মোস্তাকিম (৮) এবং সিয়াম (১১)। এদের মধ্যে আবু সাঈদ বেলুন বিক্রেতা। জুয়েল রিকশাচালক। জান্নাত বাসা-বাড়িতে কাজ করে।
ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে আসা ১৫ জনের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। আহতদের মধ্যে ৪-৫ জনের অবস্থা আশংকাজনক। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান আহতদের দেখতে হাসপাতালে আসেন। ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।